আকাশ ফুঁড়ে সূর্য হেসে উঠায় চতুর্থ দিন খেলা হতে পারত মিরপুর টেস্টের। কিন্তু কোনো ধরনের ঝুঁকি নেননি ম্যাচ রেফারি ও দুই আম্পায়ার। পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন টেস্টের চতুর্থ দিন। প্রথম দিন খেলা নির্বিঘ্নে খেলা হলেও পরের তিন দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। তারপরও দুই দল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল গতকাল শেষদিন ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মেতে উঠার। লড়াইয়ের মানসিকতায় মাঠে উপস্থিতও হন মুশফিকুর রহিম ও হাশিম আমলারা। কিন্তু খেলা আর হয়নি। তিনদিনের মতো গতকালও একরাশ হতাশ নিয়ে হোটেলে ফিরেছেন দুই দলের ক্রিকেটোররা। অথচ রোদ জ্বলমলে দিন ছিল গতকাল। তাতে খেলা হতেই পারত। সে সঙ্গে ফলও হতে পারত। যেমনটা হয়েছিল ১৫ বছর আগে সেঞ্চুরিয়ানে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড টেস্টে। সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। দুই অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়া ও নাসির হোসেনের আধুনিক মনষ্কতা টেস্টে প্রাণ এনে দিয়েছিল। ফল হয়েছিল। টানা তিনদিন খেলা না হওয়ার পরও টেস্টে ফল, ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল। অবশ্য বহু বছর পর জানা যায়, টেস্টটি ফিক্সিং করেছিলেন ক্রোনিয়া! ২০০০ সালে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলেছিল ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম চারটির দুটিতে জিতে ও দুটি ড্র হওয়ায় সিরিজ নিশ্চিত করে নিয়েছিল ক্রোনিয়াবাহিনী। সেঞ্চুরিয়ান টেস্ট তাই হয়ে উঠেছিল আনুষ্ঠানিকতার। আনুষ্ঠানিকতার টেস্ট বেশ ভালোভাবেই মাঠে গড়ায়। প্রথম দিন নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শেষ হয় এবং ৬ উইকেটে ১৫৫ রান তুলে দিন শেষ করে প্রোটিয়ারা। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। সেকি বৃষ্টি, টানা তিন দিন খেলা হয়নি তাতে। টেস্টের এমন চিত্র যখন, তখন সবাই ধরে নিয়েছিল টেস্টের ফল যথারীতি ড্র! কিন্তু ক্রোনিয়া হঠাৎই ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হোসেনকে প্রস্তাব দেন। যে প্রস্তাবে ভিড়মি খেয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক। তবে নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জিং ভেবে লুফে নেন নাসির। প্রস্তাবটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা যতটুকু স্কোর করেছে প্রথম ইনিংসে, সেখানেই ঘোষণা করবে। বিপরীতে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করবে না। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের ছুড়ে দেওয়া টার্গেট তাড়া করবে ইংল্যান্ড। যে কথা সেই কাজ। রোমাঞ্চের গন্ধ পেয়ে রাজি হয়ে যান ইংলিশ অধিনায়ক নাসির। দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ২৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রস্তাব মেনে ইংল্যান্ড ও স্বাগতিকরা ব্যাটিং করেনি প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে। পরে পঞ্চম দিন ইংল্যান্ডের জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ২৪৯ রান। ইংল্যান্ড টেস্ট জিতেছিল ২ উইকেটে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনোই হয়নি। আর হবে কি না, বলা মুষ্কিল। তবে এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়তো মুশফিক সেঞ্চুরিয়ানের পুনরাবৃতিই করতে পারতেন। কিন্তু তার আগেই ম্যাচ রেফারি দুই অধিনায়কের পরামর্শ না নিয়েই পঞ্চম দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। তাতে টেস্টের ফল লেখা ড্রয়ের তালিকায়। শেষ দিন খেলা না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিক, 'এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। আমরা খেলার জন্য উন্মুখ ছিলাম। আমরা ইনিংস ঘোষণা করলে তারা ব্যাটিং করত। কি হতো জানি না। তবে আমাদের জন্য ভালো হতো।' সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের অবিশ্বাস্যতায় চমকে উঠেছিল গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। সবাই বাহ্বা দিয়েছিল দুই অধিনায়ককে। কাল খেলা হলে কিংবা একই রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হয়তো বাহ্বা কুড়াতেও পারতেন মুশফিক!