রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, আমরা বিভাগের ১১ জন শিক্ষক ওই শিক্ষিকা ও বিভাগের সভাপতির বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেছি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ষড়যন্ত্র করে আমাদের সকলের নামে নানা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার নামে যে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ ওই শিক্ষিকা দিতে পারবে না। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষক দাবি করেন, অভিযোগকারী শিক্ষিকা সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন শিক্ষার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজ বাসার কাজ করতে বাধ্য করান। এবিষয়ে একটি অডিও রেকর্ড সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের শুনানো হয়।
এসময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুর রহমান, এক্রাম উল্ল্যাহ হক, সহযোগী অধ্যাপক তারেক নুর ও এম মাহমুদুর রহমানসহ ১১ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানানো হয়, অভিযোগকারী রুখসানা পারভীন ছাত্র-ছাত্রীদের লোভ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের দিয়ে বাসার কাজ করে নিতেন। প্রতিনিয়ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন ও অমার্জিত আচরণ করেন। এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষিকা রুখসানা পারভীন হুমকি দিয়ে বলেন, “পাছায় লাথি দিয়ে তোকে তিন তলা থেকে ফেলে দিব।” অন্য এক শিক্ষার্থীকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “তুমি কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা কর, সেটা আমি দেখে নিব।” অন্য এক ছাত্রকে পরীক্ষায় ফেল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে বারবার কাজের মেয়ে সরবরাহ করতে বাধ্য করেন। এপ্রসঙ্গে একটি অডিও রেকর্ড তারা শুনান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষিকা রুখসানা পারভীন যে শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজের মেয়ে সরবরাহ করে নিতেন তার নাম নাদিম মোস্তফা। তিনি বিভাগের মাস্টর্সের শিক্ষার্থী।
নাদিম মোস্তফা অভিযোগ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই ম্যাম আমাকে নানাভাবে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করতেন। আমি রাজশাহীর স্থানীয় ছেলে। আমার বাড়ি গোদাগাড়িতে। আমি স্থানীয় হওয়ায় ম্যাম আমার কাছ থেকে একজন কাজের মেয়ে চান। আমি একবার কাজের মেয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ম্যাম ওই কাজের মেয়ের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করতেন। তাই ওই কাজের মেয়ে ম্যামের বাসা ছেড়ে চলে যায়। ম্যামের অত্যাচারে কোনো কাজের মেয়েই তার বাসায় থাকতে পারতেন না।
তিনি আরো বলেন, চতুর্থ বর্ষে ম্যামের একটি এ্যাসাইমেন্ট আমি দিতে পারিনি। ফাইনাল পরীক্ষার আগে বিষয়টি ম্যামকে জানালে তিনি আবারো একজন কাজের মেয়ে চান। কাজের মেয়ে সরবরাহ করে দিতে পারলে তিনি আমাকে এ্যাসাইমেন্টের মার্কস দিতে চান। কিন্ত আমি অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি আমাকে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
তবে এসব বিষয়ে সহকারী অদ্যাপক রুখসানা পারভীন বলেন, নাদিমকে আমি অনেক সময় নানাভাবে সাহায্য করেছি। সে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন একবার এক মোটরসাইকেল চুরি করেছিল। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিলো। আমি সেই ঘটনায় তাকে পুলিশের হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছিলাম। তারপর থেকেই তার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক হয়। তার বাড়ি গোদাগাড়িতে হওয়ায় আমি একজন কাজের মেয়ে তার কাছ থেকে চেয়েছিলাম। এছাড়া আর অন্য কিছু আমি করিনি বা বলিনি।
এবিষয়ে নাদিম বলেন, আমি কোনো মোটরসাইকেল চুরি করিনি। একবার আমার সঙ্গে লাইসেন্স না থাকার কারণে মোটরসাইকেলসহ পুলিশের কাছে আমি ধরা পড়েছিলাম। সেই ঘটনা থেকে ম্যাম আমাকে রক্ষা করেন। এরপর থেকেই আমার কাছে বিভিন্ন সময় কাজের মেয়ে দাবি করতেন।
অন্যদিকে ঘটনার তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অদ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য প্রশাসন থেকে খুব দ্রুত কমিটি গঠন করা হবে। তাদের বিভাগে যে অভ্যান্তরীণ সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের যথাযথ পদক্ষেপ অতিদ্রুত নেয়ার বিষয়ে প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান বরাবর এক অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তুলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন।
বিডি প্রতিদিন/৪ আগস্ট ২০১৭/হিমেল