বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির চালানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফিরোজ কবির তল্লাশির আদেশ চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালত সূত্র জানায়, আবেদনে বলা হয়েছে গুলশান থানার ওই মামলায় এজাহারনামীয় ১৪ জন আসামি রয়েছে। এই মামলার পলাতক আসামিরা খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে লুকিয়ে আছেন এবং সেখানে নাশকতার জন্য বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে। তাই সন্দেহের ভিত্তিতে এমন আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এদিকে, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির আদেশের খবর আদালতেপাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশিষ্ট আদালত ও মামলার জিআর শাখায় ভিড় করেন। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও ওই মামলার কোনো নথিপত্র ও কোন ধরনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ পুলিশ জেনারেল রোডিং সেকশনের কেউই এ বিষয় কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকের জানান। তবে আদালত সূত্র জানায় অতি গোপনীয় বিষয় বলে খুব সতর্কতার সঙ্গে এই আদেশ পুলিশের কাছে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে।
অন্যদিকে, তল্লাশি পরোয়ানার প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালতের দেয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সিএমএম আদালতের দেওয়া তলাশি পরোয়ানা একই সূত্রে গাঁথা। এটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়া ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, লুকোচুরি করে আদালতের তল্লাশি পরোয়ানা জারি করা আইনের বিধানের পরিপন্থী।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র জানায়, জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সেখানে খালেদা জিয়ার বাসভবনের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ওই ঠিকানায় না থেকে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না। একারণে আইনগতভাবে তার অবস্থান নির্ণয় ও সেখানে প্রয়োজনে প্রবেশ করে তাকে যাতে গ্রেফতার করা যায় সেজন্য তল্লাশি চালানোর আদেশ প্রার্থনা করেছেন এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালত।
এর আগে খালেদা জিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাদী হয়ে এই মামলা করেন ঢাকা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু। মামলার [নম্বর: ২৫ (২) ১৫]। আসামি খালেদা জিয়াসহ ১৪ জন। তার আগে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ও হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে দু’দফা ককটেল হামলায় আহত হন ৬ জন। পরে খালেদা জিয়াকে প্রধান ও হুকুমের আসামি করে আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
অপর ১৩ জন হলেন: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, হুমায়ুন কবির, এমএ কাইয়ুম, দেওয়ান সালাউদ্দিন, মোস্তফা, মামুন ও মানিক।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে গত ৫ জানুয়ারি সরকার কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। এর আগে থেকেই খালেদা তার গুলশানের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে তার কার্যালয়ের গ্যাস, বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও অন্যান্য সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন আছে বলে অভিযোগ করছে বিএনপি নেতার। এ ছাড়া খালেদার কার্যালয়ের বাইরে থেকে খাবার প্রবেশেও বাধা দেয়া হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০১ মার্চ, ২০১৫/ রশিদা