চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এইচ এম এরশাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি রাজনৈতিক দলগুলো। গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সবকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছেন এইচ এম এরশাদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত শেখ শওকত হোসেন নিলুর ন্যাশনাল পিপপল পার্টি (এনপিনি)ও অ্যাডভোকেট নুরুল হক মজুমদারের বাংলাদেশ মুসলিশ লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল এ আহ্বানে সাড়া দেননি।
সংলাপের আহ্বান জানিয়ে এইচ এম এরশাদের চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেলিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উনি (এরশাদ) একটি স্বতন্ত্র দল করেন বিধায় বড় দল হিসেবে এ ধরনের চিঠি দিতেই পারেন। কিন্ত আওয়ামী লীগ সংলাপে নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, সংলাপ নিয়ে কেউ যদি উদ্যোগ নেয় আমরা তাকে স্বাগত জানাই। এরশাদ সাহেব যে চিঠি দিয়ে এজন্য উনাকেও স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, সরকারের সুবিধাভোগী হয়ে থাকলে সরকার কি তার কথায় কোনো গুরুত্ব দেবে?
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক আবু হাসান আহমেদ জুয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এনপিপি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ চিঠির জবাব দিয়ে সংলাপে বসার আগ্রক জানিয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাসদ (ইনু), জেএসডি (জাসদ রব), জাকের পার্টি এবং বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (বাসদ) এই দলগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে তারা জানিয়েছেন দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ বিষয়ে কথা বলছেন বলে জানান তিনি।
জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো আহ্বানে সাড়া না দিলেও এইচ এম এরশাদ সহিংসতা বন্ধে তার উদ্যোগ থেমে নেই। সহিংসতা বন্ধের দাবিতে ইতোমধ্যে রাজধানীতে একাধিক শান্তি সমাবেশ, প্রতীকী গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। আলোর মিছিল কর্মসূচি হাতে রয়েছে। সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। যতদিন সহিংসতা বন্ধ না হবে ততদিন তিনি তার উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন। তবে এইচ এম এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে থাকার কারণে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না। চিঠিতে এরশাদ চলমান নষ্ট রাজনীতিকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নতুন করে প্রণয়ন করি। ‘আসুন আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্ধারণে একত্রে মিলিত হই।’
১৪ দলের শরীক দল তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বলেন, এরশাদ সাহেব কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ চিঠি দিয়েছেন তা তিনিই ভালো জানেন। এরশাদের দল একদিকে বিরোধী দলে, আরেক দিকে তার দলের তিন নেতা সরকারের মন্ত্রী। আবার উনি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে থেকে কিভাবে সংলাপ চান? এম এ আউয়াল বলেন, উনাকে (এরশাদ) যে কোনো এক জায়গায় আসতে হবে। তিন জায়গায় থেকে সংলাপ চাইলে তো মানায় না।
জামায়াতে ইসলামীর এক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবাই সংলাপ চায়। কিন্ত এইচ এম এরশাদ যে চিঠি দিয়েছেন তার কোনো গুরুত্ব আছে কিনা সেটা বোধগম্য নয়। কারণ তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে রয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০১ মার্চ, ২০১৫/ রশিদা