ফুটবলে মোহামেডান-আবাহনীর লড়াই বলতে শিরোপার লড়াই বুঝাতো। সেটা লিগ বা অন্য টুর্নামেন্ট হোক। ঘুরে ফিরে দুদলই চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে তাদের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। মোহামেডান-আবাহনী ছাড়া অন্য কোনোদল চ্যাম্পিয়ন হবে তা ছিল স্বপ্নের মতোই। খতিয়ানে চোখ দিলেই প্রমাণ মিলবে ক্রীড়াঙ্গনে দুদলের দাপট। শুধু কি ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতেও একই অবস্থা। বারবার সাফল্য আসায় ক্রীড়ামোদীরা বিরক্ত হয়ে বলতেন, নতুনত্ব আনতে মোহামেডান-আবাহনীর দাপট ভাঙা দরকার। এতে করে খেলাধুলার আকর্ষণ আরও বাড়বে। এখন কিন্তু সেই অবস্থা নেই। যতই জনপ্রিয়তা থাকুক দুই দলের ফুটবল লড়াইয়ে গ্যালারি থাকছে প্রায় ফাঁকা। এক সময়ে ফুটবলে ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স বা বিজেএমসির দাপট কম ছিল না। কালের বিবর্তনে এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে বিজেএমসি লিগ শিরোপা জিতেছিল। ভিক্টোরিয়া আর ওয়ান্ডারার্স ৬০ দশকের পর সাফল্যের হাসি হাসতে পারেনি। মাঝে মুক্তিযোদ্ধা ও ব্রাদার্স লিগ জিতলেও ফুটবলে দুই প্রধান দল বলে চিহ্নিত করা হতো মোহামেডান আবাহনীকেই। পেশাদার লিগ শুরুর পর দৃশ্যপট পাল্টেই গেছে বলা যায়। ঢাকা আবাহনী চারবার চ্যাম্পিয়ন হলেও মোহামেডানের কাছে এ শিরোপা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আটটি আসর গড়িয়ে যাচ্ছে তারপরও সাদা-কালোরা স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি। পেশাদার লিগে মোহামেডানকে দেখা যাচ্ছে না মোহামেডান রূপে। আবাহনীও যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী দল গড়ার ব্যাপারে দুদলই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উত্তেজনা এখন শেখ রাসেল ও শেখ জামালকে ঘিরেই। দুদলই শিরোপা জেতার লক্ষ্যে বিগ বাজেটে দল গড়ছে। তারকা ফুটবলারদের ঠিকানা এখন রাসেল ও জামালই। শেখ জামাল এবারও লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছে। রানার্সআপের পথে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপের তালিকায় নেই মোহামেডান আর আবাহনী। দুই দলের করুণ পরিণতি এতেই ফুটে উঠেছে।
এখন পয়েন্ট টেবিলে যে অবস্থা তাতে দুই দলকে লড়তে হচ্ছে তৃতীয় স্থানের জন্য। ১৮ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৪ পয়েন্ট করে। ফিকশ্চার অনুযায়ী ১৬ আগস্ট পেশাদার লিগে দ্বিতীয় পর্বে মোহামেডান-আবাহনীর মুখোমুখি হওয়ার কথা। শেখ রাসেল পরবর্তী ম্যাচে চট্টগ্রাম-আবাহনীকে হারাতে পারলেই রানার্সআপ হয়ে যাবে। তা না হলে শেষ ম্যাচে রহমতগঞ্জকে হারালেই চলবে। অর্থাৎ শেখ রাসেল রানার্সআপ হচ্ছে এটা নিশ্চিতই বলা যায়। আর মোহামেডান-আবাহনীকে অপেক্ষা করতে হবে তৃতীয় স্থানের জন্য। ১৬ আগস্টই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে তৃতীয় স্থানটি। কেননা ১১ আগস্ট রহমতগঞ্জের সঙ্গে মোহামেডান। অন্যদিকে ২০ আগস্ট শেখ জামালের বিপক্ষে আবাহনীর শেষ ম্যাচ বাকি থাকলেও মূলত ১৬ আগস্ট যারা জিতবে তারাই তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করবে। বিষয়টি অবাক করে দেওয়ার মতোই। এক সময়ে যারা শিরোপা জিততে মুখোমুখি হতো তারাই কিনা এখন তৃতীয় স্থানের জন্য লড়ছে। এ এক অন্য রকম লড়াই বলা যায়। তবে তৃতীয় স্থানই দুদলের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা পেশাদার লিগে মোহামেডান কখনো পয়েন্ট টেবিলে আবাহনীকে পেছনে ফেলতে পারেনি। এবার সেই সুযোগ এসেছে। আর আবাহনী চাচ্ছে না কোনোভাবেই লিগে মোহামেডানের পেছনে থাকতে। তাই তৃতীয় স্থানে থাকতে মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে গুরুত্ব থাকবে ঠিকই।