প্রিমিয়ার হকি লিগের অনিশ্চয়তা এখনো কাটছে না। গত মৌসুমে মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টস চার দল লিগ বয়কট করে। তার পরও সাত দল নিয়ে লিগ মাঠে গড়িয়েছিল। এবারও চার দল তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। ক্লাবগুলোর দাবি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি বিলুপ্তি না করা পর্যন্ত হকির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। ফেডারেশন তিনবার দল বদলের তারিখ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু চার দলের সমস্যাতো আছেই তার উপর ঊষাও এবার বেঁকে বসেছে। ঊষার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদারই বলেছেন, সব দল অংশ না নিলে তাদের পক্ষে লিগে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ঊষা কেন হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিল এ নিয়ে নানা প্রশ্নও সৃষ্টি হয়েছে। যাক হকির জটিলতা দূর করতে দেরিতে হলেও যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এগিয়েও এসেছিলেন। যদিও এক্ষেত্রে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ভূমিকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উপমন্ত্রী উদ্যোগ নেওয়ায় অনেকে আশাবাদী হয়ে উঠেন।
সব দলের অংশগ্রহণে লিগ যেন মাঠে নামে এ লক্ষ্যে উপমন্ত্রী সব দলের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু পারেননি, কারণ চার দলের এক কথা ফেডারেশন কমিটি বিলুপ্তি না করা পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই লিগ খেলবে না। বাস্তবতা হচ্ছে চার দল দাবি তুললেও নির্বাচনের মাধ্যমে হকির কমিটি গঠন হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলরশিপ ঘিরে কিছুটা বিতর্ক ছিল ঠিকই। কিন্তু নির্বাচনতো আর বিতর্কিতভাবে হয়নি। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রও জমা দেন। পরে কেউ যদি প্রত্যাহার করে নেন তার মানে এই নয় যে নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে আবার নতুন নির্বাচন দিতে হবে। তারপরও উপমন্ত্রী চেয়েছিলেন লিগ নিয়ে বর্তমান কমিটির কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করতে পারে। এ জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করে লিগ কমিটি গঠন করতে। কিন্তু এতে চার দল রাজি নয়। আসলে তারা একেক সময় একেক দাবি তুলছে। একবার চাচ্ছে সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ, আরেকবার পুরো কমিটির বিলুপ্তি। উপমন্ত্রীর উদ্যোগ তারপরও থেমে যাচ্ছে না। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি রশিদ শিকদারকে উপমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন মোহামেডান, মেরিনার্সসহ চার ক্লাবের সঙ্গে আলাপ করতে। গতকাল রশিদ শিকদার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। বললেন, দেখি আলাপ করে তাদের মাঠে ফেরাতে পারি কি না। তবে যে সুরে তিনি কথা বলেছেন, তাতে মনে হয় না ভালো কিছু ঘটবে। চার দল না খেললে ঊষা কি করবে? এ ব্যাপারে রশিদ দৃঢ়ভাবে বলেছেন, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া ঊষা কোনোভাবেই লিগ খেলবে না। প্রশ্ন উঠেছে তাই- উপমন্ত্রী দায়িত্ব কাকে দিয়েছেন? এদিকে আবার শোনা যাচ্ছে বিশেষ এক মহল কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ করার ব্যাপারে উৎসাহও জোগাচ্ছে। আর এখানে নাকি অর্থও উড়ানো হচ্ছে। এমনও হতে পারে কমিটির ৫/৬ জন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা ছাড়া বাকিরা এই ফাঁদে পা দিয়ে হকির পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে। আসলে হকিকে ঘিরে বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। এ অবস্থায় সরকার কঠোর না হলে জনপ্রিয় খেলা হকির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।