বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল আগেই। কিন্তু হঠাৎ করে থেমে যাবেন মাইকেল ক্লার্ক, বোধকরি ভাবেননি কেউ। অন্যদের ভাবনায় কি আসে যায়? তাই সবাইকে চমকে এবং দায়ভার নিজ কাঁধে নিয়ে টেস্ট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অধিনায়ক ক্লার্ক। ফলে আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে অস্ট্রেলিয়া আসছে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে। ক্লার্কের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে স্টিভ স্মিথ। স্মিথের নেতৃত্বে নতুন এক অস্ট্রেলিয়া আসছে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলতে।
ক্লার্কের ঘোষণা হঠাৎ। কিন্তু তাকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করে অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়া ও তার পারফরম্যান্স। বিশেষ করে ট্রেন্ট ব্রিজে আড়াই দিনে ইনিংস ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় সমালোচনা সহ্য করতে পারেননি ক্লার্ক। তাই টেস্ট শেষ হওয়ার আগে কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে অবসরের বিষয়টি জানান। যখন কোচকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান, তখন সকাল ৬টা। টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানান কোচ লেহম্যান। এরপর খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া এবং ১০.২ ওভারের মধ্যেই আত্মসমপর্ণ করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে। হারের পর ক্রিকেটবিশ্ব জেনেছে এক ক্রিকেট লিজেন্ড ছেড়ে দিচ্ছেন ক্রিকেট। ক্লার্কের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়টি অনেকেই হয়তো জানতেন। কিন্তু ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি অাঁচ করতে পারেননি কেউ। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেন অস্ট্রেলিয়াকে এবং ম্যাচ শেষে মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা। অবশ্য সে সময় ওয়ানডে থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, টেস্টকে আরও সময় দেওয়াই লক্ষ্য।
ঘরের মাটিতে পাঁচ সিরিজের চারটিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে পারফরম্যান্সও খারাপ নয় ক্লার্কের। কিন্তু অ্যাশেজ খেলতে এসেই খেঁই হারিয়ে ফেলেন। এরমধ্যে ট্রেন্ট ব্রিজে গোটা অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্সই লজ্জাজনক। প্রথম ইনিংসে লাঞ্চের আগে ১১১ বলে মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি। হেরে যায় ইনিংস ব্যবধানে।
অ্যাশেজ হাতছাড়া হয়েছে। ২০-২৪ আগস্ট ওভালে শেষ টেস্ট। সেটাই ক্লার্কের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ক্লার্কের বিদায়ের পর স্মিথ নতুন অধিনায়ক হবে অস্ট্রেলিয়ার। এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার স্বাদ রয়েছে স্মিথের। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তিন টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন। পারফরম্যান্সও আলোকিত। তিন টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন এবং রান ৫৫৫। অ্যাসেজে ট্রেন্টব্রিজ ছাড়া বাকিগুলোতে তার পারফরম্যান্স খুবই উজ্জ্বল। সেই স্মিথের নেতৃত্বেই নতুন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে টেস্ট সিরিজ খেলতে আসবে ৯ বছর পর। অ্যাশেজে চরম ব্যর্থতার পর স্কোয়াডের অধিকাংশ ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ার শেষ হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, আটজন ক্রিকেটারের টেস্ট ক্যারিয়ার পুরো শেষ হয়ে যাবে অ্যাশেজ শেষে।
দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ঢাকায় পা রাখবে ২৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ৯-১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট এবং ১৭-২১ অক্টোবর দ্বিতীয় টেস্ট খেলবে ঢাকায়।