‘ভেবেছিলাম আর পরীক্ষা দিতে পারব না। শিক্ষা জীবন থেকে এক বছর হারিয়ে যাবে। সহপাঠীদের ছাড়া জুনিয়রদের সাথে পরের বার ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে হবে। অবশেষে হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। দীর্ঘ একটা বোঝা দূর হয়েছে শিক্ষকদের সহযোগিতায়।’
হাসপাতালের বেডে বসে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাস। দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেডেই দিন-রাত পার করছেন মৃত্যুর কোল থেকে ফেরত আসা এ শিক্ষার্থী।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই একটি মিছিল বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরি সামনে থেকে প্রধান ফটকে আসে। এরপর মিছিলটি বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে আসলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হন অনিক সহ আরও তিন শিক্ষার্থী। এছাড়া মারাত্মক জখমও হয়ে আহত হন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
অনিককে প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের পর গত ৩১ জুলাই কিছুটা সুস্থ হলে হাসপাতাল ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে যান এই শিক্ষার্থী। পরে শরীরের অবস্থা অবনতি হলে গত ১১ আগস্ট তাকে পুনরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) ভর্তি করা হয়। গুলিতে খাদ্যনালীসহ পেটের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতি হয়েছে এই শিক্ষার্থীর। বর্তমানে পিজিতে উন্নত চিকিৎসা চলছে আহত অনিকের।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুরু হয়েছে অনিকের বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। তবে বিভাগের শিক্ষকেরা অনিকের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাসপাতালের বেডে বসেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তাকে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার মার্কেটিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা (প্রিন্সিপাল অব মার্কেটিং-২) অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাসপাতালে দুই শিক্ষকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। বিভাগ থেকে এমন সুযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনিক বলেন, আমি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সকল শিক্ষককে পাশে পেয়েছি। সত্যি আজকে পরীক্ষা দিতে পেরে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে আমার।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, আমরা বিভাগের শিক্ষকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অনিকের পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। এ ব্যাপারে আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করেছে। এ স্বাধীন দেশে অনিকেরা এইটুকু সুবিধা না পেলে তো তাদের তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত