২০ জুন, ২০২১ ১৬:৩৭

শ্রীমঙ্গলে আজ ঘর পেল ১৬০ পরিবার

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল:

শ্রীমঙ্গলে আজ ঘর পেল ১৬০ পরিবার

শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর মাইজদিহি গ্রামের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যক্তা চম্পা রানী সরকার। সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। কোল জোরে এসেছিল ফুটফুটে এক শিশু। কিন্তু স্বামী আরেক বিয়ে করে শিশু সন্তানসহ তাড়িয়ে দেয় চম্পাকে। নিরুপায় চম্পা আশ্রয় নেয় মায়ের বাড়িতে এসে। গত তিন বছর ধরে থাকছেন একটি ঝুপড়ি ঘরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তিনি আজ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের পাকা বাড়িতে উঠবেন। দুই শতক সরকারি খাস জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়ে সেখানে একটি আধপাকা বাড়ি বানিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। এতে তিনি মহাখুশি। 

চম্পা জানান, এক খণ্ড জমি, সেই জমিতে একটি পাকা বাড়ি এমন স্বপ্ন তিনি কোনো দিনই দেখেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এখন ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতে পারবো, এটা আমার জন্য স্বর্গসু:খ।

চম্পার মতো উত্তর মাউজদিহি এলাকার স্বামী হারা মঙ্গলা রানী বিশ্বাসও পাচ্ছেন পাকা বাড়ি। স্বামী মারা যাবার পর চার সন্তান নিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে আছেন তিনি। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালান। মঙ্গলা বলেন, ‘খুব কষ্টে ছিলাম। আজ প্রধানমন্ত্রীর আমার সব কষ্ট দুর করে দিয়েছেন। আমি খুবখুশি।’ 

ঘর পাওয়ায় আনন্দে আত্বহারা একই এলাকার ৯২ বছর বয়সের মকবুল মিয়া। তিনি গত ৩০ বছর ধরে সরকারি জমিতে খোপড়ি ঘর বানিয়ে আছেন। কখনো কল্পনা করেননি নিজে একটি পাকা বাড়ি বানাবেন। মকবুল মিয়া বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ আমার আনন্দের সীমা সেই। মা জননী (শেখ হাসিনা) আমাকে একটি পাকা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন দুই শতক জমি। আমি আল্লাহর দরবাদে দুই হাত তোলে শেখ হাসিনার হায়াত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দোয়া করছি। আমি দোয়া করি উনার পিতা শেখ মুজিবের কবরে যেন আল্লা বেহেশতের ফুল বাগান বানিয়ে দেন।’ 

চম্পা, মঙ্গলা ও মকবুলের মতো এই  উপজেলার আরো ১৬০ গৃহহীন পরিবার আজ রবিবার খুজে পাবেন তাদের আপন ঠিকানা। 
সকালে গণভবন থেকে ভিডিও করফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাথে যুক্ত হয়ে এসব ঘর উদ্বোধন করেন। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো আব্দুস শহীদ এমপি, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এমপি, বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রমূখ। 

উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, অশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে উপজেলার কালপুর ইউনিয়নে মাইজদিহি পাহারে ৩০ একর সরকারি জায়গায় ৩০০টি ঘর নির্মান করা হচ্ছে। এসব ঘরে বসবাস কবরে প্রায় ১৫০০ লোক। এর আগে গত জানুয়ারী মাসে প্রথম ধাপে এ উপজেলার ৩০০ গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘর দেয়া হয়েছিল। 

প্রকল্প বাস্থবায়ন কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরবগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র দের কিলো দূরে। আর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব মাত্র ১০ কিলো। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। চারিদেকে সবুজ প্রকৃতি। প্রকল্প এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্য রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিাট ক্লিনিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। রয়েছে সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানে বন্দবস্ত অযোগ্য ১০০ একর ভূমি। সেখানে লেবু, আনারস চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের লোকেশন চমৎকার। এখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুযোগ সুবিধা থাকবে। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, একটি মন্দির নির্মান করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট, উন্নত যোগাযোগ ও গ্রোথ সেন্টারসহ সবকিছুই থাকবে। এক কথায় এখানে যারা থাকবেন তারা শহরের সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।’ 

অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আজ মুবিজ শতবর্য উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার সেই স্বপ্নপূূরণ করছেন। তিনি গৃহহীনদের সরকারি জমিতে ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন। এই মহৎ কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীন পাশে থাকতে পেরে আমি গর্ব বোধ করছি।’ 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর