ছক্কা-চারের মধ্যেই শুধু ক্রিকেটের আনন্দ খুঁজে পান যারা, তাদের জন্য দুঃসংবাদ! কারণ বিশ্বকাপে এবার হবে গতির খেলা। সঙ্গে বাউন্স-সুয়িংও থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯২ বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ী পাকিস্তান দলের সেরা স্পিনার মুশতাক আহমেদের দাবি, বাজিমাৎ করবে স্পিনাররা। ৯২-র বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হয়েছিলেন তিনি। তাই মুশতাকের বাজি স্পিনারদের পক্ষেই। ২০১৫ বিশ্বকাপকে ঘিরে বোলারদের নিয়ে সাবেক কিংবদন্তিরা কলাম লিখছেন, টক শো-তে আলোচনা করছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কারোর কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে কী অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের করার কিছুই থাকবে না!
অস্ট্রেলিয়ায় চলমান ত্রি-দেশীয় সিরিজে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ নাকানি-চুবানি খাওয়ায় ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্বের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়েছে। তবে এটাও তো ঠিক যে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সুবিধা করতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ম্যাচে জয়ের পেছনে বড় অবদান ব্যাটসম্যানদেরই। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার শেষ ম্যাচে দেখা যায়, প্রথমে ব্যাটিং করে ইংলিশরা ৩০৩ রানের বিশাল স্কোর করেও জিততে পারেনি। মনে হতেই পারে ইংলিশ বোলিংয়ে ধার ততো নেই বলেই ম্যাচে তারা হেরেছে, কিন্তু স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার আগুনঝরা বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও তো ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ৩০০ রান পার করেছে। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের সবুজ উইকেটেও তো স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা ক্যারিশমা দেখাচ্ছেন। তাই এবারের বিশ্বকাপে বাউন্সি উইকেটের কারণে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন, কিন্তু গুরুদায়িত্ব থাকবে ব্যাটসম্যানদের কাঁধেও!
বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পার্থক্য যোজন যোজন। তারপরেও দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন নিয়ে মাশরাফিরা অস্ট্রেলিয়া গেছেন। আর এই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে পেসার ও স্পিনারদের পাশাপাশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। কেননা বোলিং যতোই ভালো হোক, ব্যাটিং খারাপ হলে কিন্তু জয় পাওয়া অসম্ভব!
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দলের মূল ভরসা সাকিব আল হাসান। সুখের বিষয় হচ্ছে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বিগব্যাশ টি-২০ খেলতে বেশ আগেই অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। মেলবোর্নের হয়ে এক ম্যাচে জয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ'ও হয়েছিলেন। তাই বিশ্বকাপে এই পারফরম্যান্স সাকিবকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। যদিও বিগব্যাশে ব্যাটিং ভালো করতে পারেননি সাকিব, তবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে বিশ্বকাপে জ্বলে উঠতে পারেন তার ব্যাট।
মুশফিকুর রহিম হচ্ছেন ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার প্রতীক। দলের বিপদে জ্বলে ওঠে তার ব্যাট। ব্যাটিং অর্ডারের শুরুতে ধাক্কা লাগলেও তা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য তার আছে। আর ওপেনার তামিম ইকবাল যে কোনো উইকেটেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। তাছাড়া এর আগে দুই দুটি বিশ্বকাপে (২০০৭ ও ২০১১) খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। অতীত অভিজ্ঞতাই তামিমকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তামিম, সাকিব, মুশফিক -এই ব্যাটিং ত্রয়ীই টাইগারদের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। মজার তথ্য, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ফেবারিট ভারতকে হারিয়েছিল এই ব্যাটিং ত্রয়ীর দাপুটে তিন হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই। তবে বিশ্বকাপের ওই আসরেই অভিষেক হয়েছিল তিন ব্যাটসম্যানের। তারপর গত ৮ বছরে তারা অনেক পরিণত হয়েছেন। এবারও তিন তারকার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন দেশবাসী।
ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকলেও সাম্প্রতিক দারুণ ব্যাটিং করছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে চমক দেখাতে পারেন এনামুল হক বিজয়। মুমিনুলও দেখিয়ে দিয়েছেন তার সক্ষমতা। দলের বিপদে বড় ইনিংস খেলতে পারেন তিনি। তবে এই আসরে তুরুপের তাস হিসেবে নির্বাচকরা দলে নিয়েছেন ঘরোয়া লিগের পরীক্ষিত ক্রিকেটার সৌম্য সরকারকে। তার ব্যাটও জ্বলে উঠতে পারে। তাছাড়া লেট মিডল অর্ডারে রয়েছেন সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন। সাব্বির দ্রুত রান তোলার কৌশলটা ভালোই জানেন। সেটা তিনি অভিষেক ম্যাচেই সাইক্লোন গতিতে রান তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে সাম্প্রাতিক নিষ্প্রভ থাকলেও নাসির হোসেন ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেই দলে সুযোগ পেয়েছেন। তাই বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টাই করবেন রংপুরের এই ক্রিকেটার। শেষ দিকে অধিনায়ক মাশরাফিও কখনো কখনো ভালো ব্যাটিং করে থাকেন। তাই ব্যাটিং নিয়ে টাইগারদের দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়! এখন মূলমঞ্চে নিজেদের প্রদর্শন করতে পারলেই হয়।