অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ঢাকা ছাড়েন মাশরাফিরা। ক্রিকেটাররা এখন ক্যাম্প করছেন ব্রিসবেনে। ব্রিসবেন গেলেও টাইগারদের সঙ্গে যায়নি বিশ্বকাপ জার্সি। বিশ্বকাপে যে জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলবেন মাশরাফিরা, সেটা কাল রাতে নিয়ে গেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ব্যক্তিগত সহকারী। দল যাওয়ার এক সপ্তাহ পর জার্সি যাওয়ায় বিস্মিত অনেকেই।
২৪ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়েন ক্রিকেটাররা। তাদের আগের দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বুঝিয়ে দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের বিশ্বকাপের জার্সি। প্রতি ক্রিকেটারকে দেওয়া হয় ৫ সেট জার্সি ও ট্রাউজার এবং চার সেট অনুশীলনের জার্সি। জার্সি হাতে পাওয়ার পরই আপত্তি জানিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। গায়ে চড়ানোর পর দেখা গেছে জার্সির কলার সমস্যা। নিচের দিকে হেলে পড়েছে কলার। যার ফলে গায়ে ভালোভাবে সেট হচ্ছিল না। শুধু কলার নিয়েই নয়, জার্সির সাইজ নিয়েও আপত্তি ছিল ক্রিকেটারদের। এর ফলে জার্সি নিয়ে আপত্তি জানান ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের আপত্তির মুখে বিসিবি জার্সি প্রত্যাহার করে নেয় এবং প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেক্সওয়েভকে নতুন করে জার্সি তৈরি করে দিতে বলে। টেক্সওয়েভও রাজি হয়। সেই মোতাবেক তারা দুই-তিন দিনের মধ্যে নতুন জার্সি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু সেটা দেয় ২৯ জানুয়ারি। আর সেই জার্সি নিয়ে গতকাল রাতে ব্রিসবেনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন বিসিবি সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী। নতুন করে ৫ সেট জার্সি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার সাবি্বর, 'জার্সি নিয়ে একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। সেটার সমাধান হয়েছে। সমাধান শেষে আজ (কাল) রাতে বিসিবি সভাপতি স্যারের ব্যক্তিগত সহকারী জার্সি নিয়ে ব্রিসবেন যাচ্ছেন। তিনি মেলবোর্ন যাবেন বিসিবির কাজে। সেখানে যাওয়ার পথে জার্সিগুলো ব্রিসবেনে দিয়ে যাবেন টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ভাইকে।'
ক্রিকেটাররা যখন ব্রিসবেন যান, তখন সঙ্গে নিয়ে যান অনুশীলন জার্সি। অবশ্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচে যাতে কোনো রকম ঝামেলায় পড়তে না হয়, সেজন্য এক জোড়া ম্যাচ জার্সি নিয়ে যান ক্রিকেটাররা। এক জোড়া জার্সি নিয়ে যান ক্রিকেটাররা টিম ম্যানেজার সুজনের ইচ্ছায়। নতুন যে জার্সি পাঠানো হয়েছে কাল, তাতে পরিবর্তন হয়েছে সামান্য। আগের জার্সিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখচ্ছবি ছিল জলছাপ দেওয়া। এখন সেটা আরেকটু গাঢ় ও সোনালি রংয়ের করা হয়েছে। এতে করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখচ্ছবি অনেক বেশি উজ্জ্বল।
টেক্সওয়েভ অবশ্য এবারই প্রথম বাংলাদেশ দলের জার্সি তৈরি করেনি। টি-২০ বিশ্বকাপেও জার্সি দিয়েছিল। কোম্পানিটি বিসিবির তালিকাভুক্ত। কিন্তু শোনা যায়, জার্সি তৈরিতে কোম্পানিটি বিসিবির একজন পরিচালক ও কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতা পেয়েছে পুরোপুরি। ক্রিকেট সমালোচকদের প্রশ্ন, বিশ্বকাপ জার্সি তৈরি করা উচিত ছিল আরও অনেক আগে। প্রাথমিক স্কোয়াডের ৩০ ক্রিকেটারের নামে এবং নাম্বার দিয়ে জার্সি তৈরি করা উচিত ছিল। তাহলে এই সমস্যার তৈরি হতো না। দল যাওয়ার এক সপ্তাহ পর জার্সি পাঠাতে হতো না। কিসের লাভে এত দেরি করা হয়েছে, জানতে চেয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক। বিশ্বকাপের জার্সি নিয়ে অনেক প্রশ্নও রয়েছে। শোনা যায়, কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই জার্সি তৈরি করে দিয়েছে কোম্পানিটি। অথচ ৩ লাখ টাকার উপরে যে কোনো বিষয়ের জন্য টেন্ডার ডাকার নিয়ম। কিন্তু বিসিবি ৯ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে জার্সি তৈরি করে দেওয়ার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়। ২১ জানুয়ারির মধ্যে ডেলিভারীর কথা বলে। কিন্তু ২২ জানুয়ারি জার্সি প্রদান করে টেক্সওয়েভ। ফলে তাড়াহুড়া করতে যেয়েই এরকম অবস্থার তৈরি হয়েছে।
বিশ্বকাপে যেখানে সাফল্য পেতে মরিয়া পুরো দেশ। তখন শুরুতেই এমন গাফিলতি, অন্য নজরে দেখছেন ক্রিকেট সমালোচকরা।