এখনো স্মৃতিকাতর করে তুলে দেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীদের। তাদের মন মাতানো ফুটবল এখনো চায়ের আড্ডায় ঢেউ তুলে। এসব তারকা স্ট্রাইকারের দেখানো পথে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়িয়ে এখন মাঠ মাতাচ্ছেন জাহিদ হোসেন এমিলি। আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যায় এমিলি এখন দেশসেরা স্ট্রাইকার। অথচ কাল বাংলাদেশের জীবনবাজির লড়াইয়ে দেশসেরা স্ট্রাইকার লড়েছেন নিজের ছায়ার সঙ্গে। এমিলিকে আড়াল করে কাল ‘ত্রাণকর্তা’ হয়ে উঠেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। হেমন্তের দৃষ্টিনন্দন গোলে ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ৬ ফেব্রুয়ারি সেমিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড কিংবা বাহরাইন।
সত্তর-আশি-নব্বই দশকে এনায়েত, সালাউদ্দিন, আসলাম, চুন্নু, আলফাজদের দৃষ্টিনন্দন ফুটবল ভাষার মাস। এমন পরিবেশে কাল মধ্য দুপুর থেকেই বাজছিল ভাষার গান, স্বাধীনতার গান। এমন সব উদ্দীপনার গানে ক্রুইফবাহিনী অলআউট ফুটবল খেলে মন ভরিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। মান বাঁচিয়েছে দেশের।
১৫ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে খেলার টার্গেটে দুর্বল গ্রুপ সাজিয়েছিল বাফুফে। গ্রুপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মালয়েশিয়াকেও নিয়েছিল। সিলেটে মালয়েশিয়ার কাছে হেরে খাদের কিনারায় চলে আসেন মামুনুলরা। ফলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি রূপ নেয় বাঁচামরার। অবশ্য ড্র করলেও সেমিতে খেলত গোল পার্থক্যে। কিন্তু নিজেদের প্রমাণে মরিয়া মামুনুল-জাহিদ-এমিলি-ভিনসেন্টরা ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্রের ওপর এবং জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। যদিও ম্যাচের প্রথম আক্রমণ ছিল শ্রীলঙ্কার। ৩ মিনিটে কর্নার পায় দলটি। ওই পর্যন্ত। এরপর জাহিদ-সোহেল রানা-জামাল-এমিলি-ভিনসেন্টদের সাঁড়াশি আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। ১১ মিনিটে গোলের সুযোগও তৈরি হয় সাঁড়াশি আক্রমণে। কিন্তু উইঙ্গার জাহিদের ব্যক্তিগত স্বার্থপরতায় গোল পায়নি বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত ধরে প্রতিপক্ষের লেফট ব্যাককে কাটিয়ে ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে। বক্সে দাঁড়ানো এমিলিকে বল না বাড়িয়ে নিজেই শর্ট নেন। দুর্বল শর্ট গোলরক্ষক সুজান পেরেরার ধরতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। চার মিনিট পর জামাল ভূঁইয়া ক্রসে হেড করে এমিলি। কিন্তু গোল পোস্টের নিশানা পায়নি শর্টটি। ৩২ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন সোহেল রানা। ডান প্রান্ত থেকে লম্বা থ্রো করেন রায়হান। লঙ্কান রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে ছোট বক্সে দাঁড়ানো সোহেল রানার পায়ে পড়ে। সোহেল বল থামিয়ে শর্ট নেওয়ার আগেই কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন সাজিত কুমারা। ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ দেখা পায় বহু আরাধ্য সেই গোলের! এমন সেই গোল, যার দেখা মিলে শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লিগ কিংবা জার্মান লিগে। এমন ঠাসা বুুনোনের আক্রমণ দেখাও সৌভাগ্যের বিষয়। গোলরক্ষক শহিদুল ইসলাম থেকে বল পেয়ে জাহিদ এগিয়ে যান কয়েক পা। এরপর মধ্যমাঠ থেকে প্রায় ৩০ মিটার লম্বা ক্রস করেন ডি-বক্সে। তার বাড়ানো ক্রস বুক দিয়ে থামিয়ে বাড়িয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো হেমন্তকে। হেমন্তও বাড়ানো বলে সময় নষ্ট না করে চকিতে ডান পায়ের ভলিতে কোনাকুনি শর্টে দুর্দান্ত গোল করে বাংলাদেশের বুক থেকে হাজার মণ ওজনের পাথর নামিয়ে দেন (১-০)। হেমন্তের গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
সেমিতে খেলতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ড্র। বিপরীতে লঙ্কার প্রয়োজন ছিল জয়। এমন সমীকরণ যখন ম্যাচের, তখন প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্র। তাই জয়ের জন্য মরিয়া শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। ৬৭ মিনিটে আদায় করে নেয় পেনাল্টি। অবশ্য এই পেনাল্টির জন্য শতভাগ দোষ গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেলের। ডি-বক্সের মাথায় অযথাই ফাউল করেন ইশানকে। কাতারের রেফারি খামিশ মোহাম্মদ সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন পেনাল্টির। পেনাল্টি থেকে নাকালা রোশান শর্ট নেন। শর্টটি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন শহিদুল। ফিরতি বলে আবার হেড করেন রোশান। এবারও ধরে ফেলেন শহিদুল। ভিলেন শহিদুল মুহূর্তে হয়ে যান নায়ক! গোলরক্ষকের পেনাল্টি বাঁচানোর পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৮৩ মিনিটে হেমন্তের বাঁ পায়ের শর্ট গোলরক্ষক সুজান পেরেরা বাঁচিয়ে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে রক্ষা করেন দলকে। আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল ৫টায় বাহরাইন ও থাইল্যান্ড মুখোমুখি হবে। চ্যানেল নাইন ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।